জাতীয়

ট্রেনের বগি নিয়ে চবি ছাত্রলীগের রাজনীতি, বিব্রত মেয়র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম

প্রকাশ: ৯ মার্চ ২০১৯, ২০:১৪

ট্রেনের বগি নিয়ে চবি ছাত্রলীগের রাজনীতি, বিব্রত মেয়র

সংলাপে খোলামেলা কথা বলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন / ছবি: বার্তা২৪

ট্রেনের বগি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দল, আধিপত্য আর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষোভ ও অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

তিনি বলেছেন, ‘শাটল ট্রেনের বগিগুলোর প্রতিটিতে একটি করে গ্রুপের নাম লেখা থাকে। ওই বগির মেম্বার ছাড়া আর কোনো শিক্ষার্থী সেখানে বসতে পারে না। এক ধরনের অস্বস্তি আর বিব্রতবোধ পরিবেশ তৈরি হয়। এগুলো কেনো রাজনীতি না বরং এসবে রাজনৈতিক বিভাজন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। নেতৃত্বহীনতা আর গঠনমূলক রাজনীতিকে ধ্বংস করছে।’

শনিবার (৯মার্চ) দুপুর ১২টায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে দৃষ্টির আয়োজনে ‘দৃষ্টি আড্ডা, সাথে নগর পিতা’ শীর্ষক তারুণ্যের সংলাপে ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন মেয়র।

সংলাপে প্রশ্ন উত্তর পর্বের এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম ফাহিম ষোলশহর স্টেশনের অব্যবস্থাপনার বিষয়ে মেয়রের মনোযোগ আর্কষণ করে। তিনি জানান, ষোলশহর থেকে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন। কিন্তু স্টেশনের অব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত ও পথচারী কাটা পড়ে মারা যান।

এ সময় নাছির বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহর যেভাবে গড়ে ওঠার কথা ছিল, ওইভাবে পরিকল্পনামাফিক গড়ে ওঠেনি। যখন যেটা করার প্রয়োজন মনে করছে, প্রকল্প করে কাজ করছে। কিন্তু সকলের পরামর্শ নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন অনুধাবন করেনি। এর কারণে অনেক সড়কের পাশ দিয়ে রেললাইন করেছে। কোনো কোনো জায়গায় ক্রসিং নেই, কোথাও ক্রসিং থাকলেও লোকবল নেই। ট্রেন আসা-যাওয়ার তথ্য ঠিকভাবে জানতে পারেন না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিশ হাজার লিফলেট বিতরণ করেছি, ৪১টি ওয়র্ডে মাইকিং করে মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। এরপরও কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি সমস্যা ও সংস্কার নিয়ে রেলওয়ের জিএমের সাথে বসব। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেব।’

এ সময় তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী রায়হান ইউসুফকে রেলওয়ের বিষয়টি নোট করার নির্দেশ দেন।

কথার এক প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘বিষয়টি আমাকেও খুবই মর্মাহত এবং বিব্রত করে। রেলওয়ের বগিতে রং দিয়ে একটি নাম লেখা থাকে। এর কারণে এখন কেউ ছাত্রলীগ, ছাত্রদল হতে পারছে না। কেউ তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতি করছে না। কেউ একটি, দুটি মিছিল করলেই অনেক বড় পদ দাবি করছে।’

এ সময় আলোচক বিষয়টি বগিভিত্তিক রাজনীতি বললে তিনি এর দ্বিমত পোষণ করেন। একইসাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকেদের গভীরে গিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২কিলোমিটার দূরত্বে হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে শাটল ট্রেন শিক্ষার্থীদের একমাত্র মাধ্যম। এই ট্রেনের বগিগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ। এই বগির রাজনীতির মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের মূলধারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন বলে দাবি করেন নেতারা। তবে এর আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে প্রায় সময় সংঘর্ষে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেছে।

এই বগিভিত্তিক রাজনীতির একটি বড় অংশই নিজেদের চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী বলে দাবি করেন। অপর অংশটি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী বলে আসছেন। এর রেস টেনে ধরতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসান বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। এরপরও থেমে থাকেনি এ বগিভিত্তিক রাজনীতি কার্যক্রম।

ট্রেনের বগি নিয়ে চবি ছাত্রলীগের রাজনীতি, বিব্রত মেয়র | সময় নিউজ