প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২৩, ৪:৩৫:২৮
গ্রীষ্মের তাপদাহ। লকডাউন ও আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের ছুটি। এত কিছুর মধ্যেও আব্দুর রহমান এবং সাইফুল আহমেদ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবলের ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টা আগেই মিডিয়া বক্সে উপস্থিত। ম্যাচের জন্য নিয়োজিত আট জন বলবয়রাও একই সময়ে হাজির। রহমান এক যুগের বেশি সময় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স মিডিয়া সহকারি হিসেবে কাজ করছেন। সাইফুল প্রায় আট বছরের বেশি সময়। তারা দুই জনই চুক্তিতে দিন ভিত্তিক মজুরি পান ফুটবল ফেডারেশনের কাছ থেকে। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস হলেও শনিবারও অন্য দিনগুলোর মতো স্বাভাবিক মজুরিই পাবেন তারা। বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে থাকছে না বাড়তি কোনো সম্মানি। এভাবেই বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে তাদের। বিশেষ দিনে বাড়তি সম্মানী না পাওয়া নিয়ে তাদের আক্ষেপ নেই। উভয়েরই একটু চাওয়া, ফুটবল ফেডারেশনের স্থায়ী কর্মচারী হওয়া। এতেই তৃপ্ত হবেন তারা। আব্দুর রহমান কানে কম শোনেন। চোখেও খানিকটা সমস্যা। শারীরিক এই প্রতিবন্ধী সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। তাই তার খরচের খাত এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। হ্যান্ডবল ফেডারেশন মাসিক একটা বেতন দেয় এর পাশাপাশি ফুটবল ফেডারেশনের অস্থায়ীভাবে কিছু আয়ে মাস চলে রহমানের। ফুটবল ম্যাচ না চললে আবার সেই আয় বন্ধ। আবার অনেক সময় ম্যাচ, রাউন্ড পেরিয়ে লিগ শেষ হয়ে গেলেও বিলের জন্য ঘুরতে হয় তাদের। এত বঞ্চনার পরেও পুরো সময় ফুটবলেই থাকতে চান রহমান, ‘ফুটবল আমার খুব ভালো লাগে। ছোটবেলা থেকেই এখানে আছি। খেলোয়াড়, সাংবাদিক সবাই আমাকে ভালোবাসে। ফুটবল ফেডারেশন আমার বিষয়টি দেখলে ফুটবলই কাটিয়ে দিতাম বাকি সময়।’ রহমানের তুলনায় অনেক তরুণ সাইফুল। বয়স অল্প হলেও নিজে চলে পরিবারকে টানতে হয় তার। ফুটবল থেকে আয়টা নিয়মিত ও স্থায়ী নয়। অন্য কাজের সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকলেও ফুটবলের সাথে এবং মিডিয়াতেই কাজ করতে চান সাইফুল, ‘নিজে এক সময় ছোটবেলায় ফুটবল খেলেছি। ফুটবল খেলতে খেলতেই এই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া। এখানে কাজ করে মজা পেয়েছি। অন্য জায়গায় আর কাজ খুঁজিও না। বয়স বাড়ছে, পরিবারের বাড়তি দায়িত্ব আসছে। সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলে আমি এখানেই আরও বেশি সময় থাকতাম।’ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাইফুল, রহমানের মতো আরও অনেক রয়েছেন যারা শুধু ভালোবাসার টানে ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা খেলায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। এই খেলার মাধ্যমে তাদের আয় উন্নতি খুব একটা না হলেও তাও তারা আষ্ঠেপৃষ্ঠে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস আসে-যায়। মিডিয়ায় এদের নিয়ে আলোচনা-লেখালেখি হয়। এরপরও খুব একটা বদলায় না এদের ভাগ্য। দেড় যুগের বেশি সময় কাজের পর রহমানের দিন মজুরি মাত্র ৬০০ টাকা।