দেশের পিএইচডিধারী ফুটবলার জুয়েল
প্রকাশিত :
২১ জুন ২০২৩, ১০:০৯:২১
আপডেট :
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:০৭:৫৪
নাগরিক প্রতিবেদক
সাবেক ফুটবলার ও অনেক ক্রীড়াবিদ খেলা ছাড়ার পর কোচিং ও সাংগঠনিক দিকেই বেশি যান। অনেকে আবার ব্যবসা ও অন্য দিকে পরবর্তী জীবন কাটান। বাংলাদেশে খুব কম ক্রীড়াবিদ আছেন, যারা খেলা শেষে উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনার চেষ্টা করেন। সাবেক ফুটবলার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জুয়েল সেই ব্যতিক্রমদের একজন।
বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল খেলা নিয়ে গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষা। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কিছুদিন আগে। ভারতের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী থেকে সম্প্রতি ফুটবলের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশের ফুটবলাঙ্গনে বিশেষ করে সাবেক কোনো ফুটবলারের এমন কৃতিত্ব নেই। শুধু ফুটবল নয়, সামগ্রিক ক্রীড়াঙ্গনই খুব কম ক্রীড়াবিদের এমন কৃতিত্ব রয়েছে।
ইতোমধ্যে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রীড়া এবং বিশেষত ফুটবল গবেষক হিসেবে দারুণ সমাদৃত হচ্ছেন। এখন অবধি তার ১৮টি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিখ্যাত জার্নালগুলোতে। সেগুলো থেকে সাইটেশনের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬৫ ছাড়িয়েছে।
তার লেখার বিষয়বস্তু হলো-ফুটবলের গতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ক্রীড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়। ‘অফ দ্য বল মুভমেন্ট’ তার সর্বশেষ প্রকাশিতব্য গবেষণাপত্র। জার্মানি, তুরস্ক, আমেরিকার অনেক ক্রীড়া গবেষক তার গবেষণাপত্রগুলো থেকে সাইটেশন করছেন।
তার লেখার বিষয়বস্তু হলো-ফুটবলের গতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ক্রীড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়। ‘অফ দ্য বল মুভমেন্ট’ তার সর্বশেষ প্রকাশিতব্য গবেষণাপত্র। জার্মানি, তুরস্ক, আমেরিকার অনেক ক্রীড়া গবেষক তার গবেষণাপত্রগুলো থেকে সাইটেশন করছেন। যা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গর্বের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন জুয়েল। প্রত্মতত্ত্বের মতো বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে খেলাধুলায় গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার ব্যাখা দিলেন এভাবে, ‘বিকেএসপি থেকে এইচএসসির পর লক্ষ্য ছিল স্পোর্টস সাইন্স নিয়ে পড়ার। কিন্তু বাংলাদেশে তখন স্পোর্টস সাইন্স নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও জাহাঙ্গীরনগরে প্রত্মতত্ত্বে সুযোগ পাই। বিকেএসপির অনেক বড় ভাই জাহাঙ্গীরনগরে পড়তেন। তাদের পরামর্শ ও অনুপ্রেরণায় জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হই।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ফুটবলে ভালোই সময় দিতে পেরেছেন। প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে বেশ কয়েক বছর একটানা খেলেছেন। ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স, আরামবাগ, ওয়ারী, অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। অগ্রণী ব্যাংকের অধিনায়কও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলেরও প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করার পর নিজের নেশা উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায় আরও বেশি মনোযোগী হন। শারীরিক শিক্ষা কলেজে বিপিএড ডিগ্রি নিয়ে বিকেএসপিতে বিরমলের অধীনে এক বছর কোর্স করেন। ২০০৯ সালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগে ফিজিক্যাল ইন্সট্রাকটর হিসেবে যোগদান করেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর তার উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা আরও বেগবান হয়। ভারত সরকারের আইসিসিআর স্কলারশীপের মাধ্যমে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর তার উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা আরও বেগবান হয়। ভারত সরকারের আইসিসিআর স্কলারশীপের মাধ্যমে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। মাস্টারস অফ ফিজিক্যাল এডুকেশনে তার বিশেষায়িত বিষয় ছিল ফুটবল। দুই বছরের সেই মাস্টার্স কোর্সে তিনি স্বর্ণপদকও পেয়েছিলেন।
এরপর আরেক স্কলারশীপে জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্পোর্টস ম্যানেজম্যান্টের ওপর ডিপ্লোমা করেন। সর্বশেষ ভারতের বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন থেকে ‘ডিজিট রেসিও বডি কম্পোজিশন এন্ড মটর ফিটনেস কম্পনেন্টস এজ ডিটারমিনিটস অফ সকার স্পেসিফিক স্কিল পারফরম্যান্স’ টপিকে পিএইচডি করেন। এটি মূলত একজন ফুটবলারের পারফরম্যান্স নানা কারণে প্রভাবিত হতে পারে। সেই প্রভাবকগুলো নিয়ে ছিল তার গবেষণা।
উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাওয়ায় বিশেষ ধন্যবাদ দিলেন তার বর্তমান কর্মস্থলকে, ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষ করে আমার শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মহোদয় সব সময় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য আন্তরিক ছিলেন। আমার অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আলোকিত করতে পারব।’
জুয়েলের কোচিংয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় এক ফুটবল টুর্নামেন্টে রানার্স আপ হয়েছিল।
গবেষণা ও বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির পাশাপাশি কোচিংয়েও সিদ্ধহস্ত জুয়েল। ইতোমধ্যে এ লাইসেন্স কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এখন বাফুফের কোচ এডুকেটর হিসেবে কাজ করেন। ঢাকা মোহামেডানে এক মৌসুমে সহকারি কোচের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।